sponsor

sponsor
এস,এস কানেকশনস্. Theme images by kelvinjay. Powered by Blogger.

Slider

Updates

updates

National News

News

More News

Life & style

Games

Sports

World News

» »Unlabelled » মুসলমান যুবকরা - হিন্দুবাড়ি ও মন্দির বাঁচাতে জীবন বাজি রেখেছিলেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দুদের জীবনে এমন ভয়ানক দিন স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে কখনো আসেনি।
শত শত মানুষ যখন বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নাসিরনগরের হিন্দু বাড়ি এবং মন্দিরগুলোতে ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়, তখন আতঙ্কিত হিন্দুদের অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে প্রাণ রক্ষার জন্য পালাতে শুরু করে।
কিন্তু এ সময়ই হামলাকারীদের সামনে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এলাকার কয়েকজন মুসলমান যুবক।
হিন্দুবাড়ি এবং মন্দির বাঁচাতে তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন।
এদেরই একজন জামাল উদ্দিন – তিনি নাসিরনগর সদর হাসপাতালে স্টোরকিপারের চাকুরী করেন। হিন্দুদের বাড়িগুলোতে যখন আক্রমণ শুরু হয়, জামালউদ্দিন তখন হাসপাতালে বসে থাকতে পারেননি। তিনি দৌড়ে যান কিছুটা দূরে অবস্থিত দত্তবাড়িতে।
তার সাথে আরো কয়েকজন মুসলমান যুবক দত্তবাড়ির প্রধান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলেন। আট থেকে দশজন মুসলমান যুবক দত্তবাড়ির সামনে সারিবদ্ধ হয়ে আক্রমণকারীদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
কিন্তু আক্রমণকারীদের সংখ্যার তুলনায় জামালউদ্দিন ও সহযোগীদের শক্তি ছিল খুবই নগণ্য।
হামলাকারীদের কারো কারো হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠি। তারা জামালউদ্দিনকে রড় দিয়ে আঘাত করলে তিনি মাটিতে পড়ে যান।
শেষ পর্যন্ত দত্তবাড়ির পূজামণ্ডপ রক্ষা করতে পারেননি জামালউদ্দিন।
জামালউদ্দিন ও তার সহযোগীদের আঘাত করে হামলাকারীরা ভেতরে ঢুকে যায়। তারপর হামলাকারীরা সে পূজামণ্ডপ গুড়িয়ে দেয়। শত শত আক্রমণকারীর সামনে নিজের জীবন বাজি রেখে জামালউদ্দিন কেন এগিয়ে গিয়েছিলেন?
জামালউদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমি তখন নিজের জীবনের চিন্তা করি নাই। ওরা আমার ভাই, এটা আমার গ্রাম। ওরা তো নিরপরাধ লোক। এ বর্বরোচিত হামলা কেন এদের উপর হবে?
তিনি বলছিলেন হিন্দু গ্রামবাসীদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তিনি মৃত্যুর জন্য তৈরি ছিলেন।
রবিবার সকালে হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে জামালউদ্দিনের শরীর এখনো শিউরে ওঠে।
ভয়ঙ্কর এক সাম্প্রদায়িক আক্রমণ দেখেছেন জামালউদ্দিন। এ ধরনের আক্রমণের কথা তিনি কখনো ভাবতেও পারেননি।
নাসিরনগর উপজেলার দত্তবাড়ি, নমশূদ্র পাড়া, কাশিপাড়া এবং ঘোষ পাড়ায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে উগ্র ইসলামপন্থীদের একটি গোষ্ঠী।
জামালউদ্দিন বলছিলেন, ওইদিন আমার নিজের প্রতি একটুখানিও মায়া ছিল না। আমার এক ভাই অন্যায় হামলার শিকার হবে, আমাদের মা বোনদের ইজ্জত যাবে – তাহলে আমাদের থেকে লাভ কী?
জামাল উদ্দিনের সাথে হিন্দুবাড়ি রক্ষা করতে আরো এগিয়ে গিয়েছিলেন আব্দুল মজিদ। তিনি স্থানীয় একটি স্কুলের লাইব্রেরিয়ান। মি: মজিদ জানালেন আক্রমণকারীদের বয়স ২০-২৫ বছরের মধ্যে বলে তাদের মনে হয়েছে।
মজিদ বলছিলেন, যে হিন্দু যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কাবাঘরকে অবমাননা করে ছবি দেয়া হয়েছে তার বিচার হোক। কিন্তু তারা কখনোই চাননি নির্বিচারে হিন্দু বাড়ি ও মন্দিরে হামলা হোক।
তিনি বলেন, “যারা হামলা করছিল, তারা মুসলমান নামের কলঙ্ক। এরা অন্য কোন হাসিল আদায় করার জন্য এ ঘটনা ঘটাইয়া গেছে। আমরা বলছি বাড়িতে ঢুকতে হইলে আমাদের মাইরা তারপরে ঢুকতে হইব”।
হামলাকারীরা মজিদকে ইট এবং লাঠি দিয়ে আক্রমণ করেছিল।
মজিদের বর্ণনায় নাসিরনগরে হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাইয়ের মতো বহু বছর ধরে একসাথে বাস করছে। উভয় ধর্মের উৎসবে গ্রামের সবাই যোগ দেয় এবং সহযোগিতা করে।
রবিবার সকালে শতশত আক্রমণকারীর মাঝে কয়েকজন মুসলমান যুবক যেভাবে হিন্দুদের রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন, সেটিকে কৃতজ্ঞতার সাথে বর্ণনা করছেন স্থানীয় দত্তবাড়ির বাসিন্দারা।
দত্তবাড়ির বাসিন্দা নীলিমা দত্ত বলেন, “এক মুসলমান হামলা করেছে, আরেক মুসলমান বাঁচাইছে। ওরা যদি আমাদের রক্ষা না করতো, তাহলে এখানে লুটপাট হইতো”।
তিনি বলছিলেন যে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক আক্রমণ তিনি তার জীবনে কখনো দেখেননি। হামলাকারীরা পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করলেও মুসলমান যুবকদের বাধার কারণে বাসস্থানের ঘরে ঢুকতে পারেনি। তবে বাইরে থেকে ঢিল ছুঁড়েছে।
এমনকি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দত্তবাড়িতে এ ধরনের আক্রমণ হয়নি বলে নীলিমা দত্ত উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মুসলমানদের সহযোগিতায় হিন্দুরা দত্তবাড়িতে পূজার আয়োজন করেছিল বলে এখানকার বাসিন্দারা জানালেন।
নীলিমা দত্ত বলেন, যে হিন্দু যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কাবাঘরকে অবমাননা করে ছবি দেয়া হয়েছিল, তার কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।
কিন্তু সে ছবির জের ধরে সব হিন্দুবাড়ি এবং মন্দিরে কেন হামলা চালানো হলো, সে প্রশ্নের উত্তরটাই খুঁজে পাচ্ছেন না নীলিমা দত্ত।
সূত্র বিবিসি

«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply