মাদক ব্যবসার টাকায় মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন মাদকসম্রাজ্ঞী দুই বোন আসমা আহমেদ ডালিয়া (৩৭) ও স্বপ্না আক্তার (৩০)। মাত্র কয়েক বছর ভয়ঙ্কর নেশা ইয়াবার অবৈধ ব্যবসা করে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চলন-বলনে লেগেছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। হয়েছেন বিশাল অর্থবিত্তের মালিক। ডালিয়া আহমেদ এলিফ্যান্ট রোডের সেল সিদ্দিক প্লাজায় ১৬৬০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট আর স্বপ্না আক্তার কলাবাগানে সেল হাসনা হেনায় ১৮০০ স্কয়ার ফিটের ৫ কক্ষবিশিষ্ট ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করতেন। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা। ফ্ল্যাট দুটির ভিতরের সাজসজ্জা দেখলে যে কারোর চোখ জুড়িয়ে যাবে বলে জানান ওইদিন সেখানে অভিযানে অংশ নেওয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, চাকরি জীবনে বহু বাড়ি ও ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েছি কিন্তু এমন চাকচিক্য ও দামি আসবাবপত্র খুব কমই দেখেছি। এ ছাড়া তাদের মাদকের ব্যবসা পরিচালনার জন্য রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি। সে গাড়িতে করে তারা ইয়াবা পৌঁছে দিতেন ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। হাতিরপুলে রেইন বাথ নামে ছোট্ট একটি স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসার আড়ালে তারা মাদকের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।
তদন্তকারী সূত্র জানায়, ডালিয়া ও স্বপ্নার বাবা ছিলেন সরকারি কর্মচারী। সংসারে সচ্ছলতা আনতে তারা ১০-১২ বছর আগে অবৈধ হেরোইনের ব্যবসা শুরু করেন। পরে দেশে ইয়াবার নেশা বিস্তার লাভ করলে অতিরিক্ত মুনাফা ও দ্রুত বহু টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্নে ইয়াবা ট্যাবলেটের অবৈধ ব্যবসা শুরু করেন। এ ব্যবসা শুরুর পর তাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এর পরের গল্প শুধুই এগিয়ে যাওয়া। ইয়াবা বিক্রির টাকায় মালয়েশিয়ায় কেনা বাড়িতে বসবাস করে ডালিয়ার বড় ছেলে ও তার খালা শিলা। ডালিয়ার ছোট ছেলে পড়ালেখা করছে ধানমন্ডির একটি নামিদামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। সূত্র জানায়, ডালিয়ার স্বামী রবিউল ইসলামের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর। তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয় ১৮ বছর আগে। ২০০৯ সালে রবিউলের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মাদক আইনে একটি মামলা হয়। স্বপ্নার আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সেই সংসার বেশিদিন টেকেনি। পরে তিনি শামীমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ দম্পতির তিন বছরের একটি পুত্রসন্তান আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৯ জুলাই সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা ৫ ঘণ্টা এলিফ্যান্ট রোড, কলাবাগান ও পশ্চিম রাজাবাজারে পৃথক তিনটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, নগদ ২ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন আসমা আহমেদ ডালিয়া, তার স্বামী রবিউল ইসলাম, স্বপ্না বেগম ও তার স্বামী শামীম আহমেদ, ডালিয়ার মা মনোয়ারা বেগম ও আত্মীয় পরিচয় দেওয়া মাহমুদা রানী। এ ব্যাপারে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ও সুমনুর রহমান জানান, আসামিদের গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। সোমবার রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য আদালত দিন ধার্য করেছে। রিমান্ড পাওয়া গেলে আসামিদের কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। সূত্রঃ অনলাইন।
No comments: