মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা নিয়ে বরিশাল নগরীর অলি-গলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইয়াবা। নগরীতে ইয়াবা আক্রান্ত তরুন-তরুনীর হাজার হাজার পরিবার আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে তাদের বাবা-মাসহ নিকট স্বজনেরা। ক্রমশ বেড়ে চলেছে এর রাজত্ব। নগরী ছাড়িয়ে “বাবা”র দাপট এখন গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত জনপদেও। গ্রাম-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে কোথায় নেই ইয়াবা? এমন কোন অঞ্চল নেই যেখানে এর ভয়াল থাবা পৌছায়নি। বীরদর্পে ইয়াবা ঘুরে বেড়াচ্ছে বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত এলাকায়। বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, হিজলা, মুলাদীর, মেহেন্দীগঞ্জে মাদকসেবীদের মাঝেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ‘‘বাবা” নামক এ ড্রাগ।
চাইলেই পাওয়া যাবেনা মদ-গাঁজা-হেরোইন-ফেন্সিডিল। কিন্তু ইয়াবা নামক “বিষের বড়ি” পাওয়া যায় যত্র-তত্র, যখন-তখন। ১০০ টাকা হলেই মিলবে ইয়াবা। পরিমান যত বেশী মূল্য তত কম। অতি উচ্চ মাত্রার এ নেশা দ্রব্যটি এতটাই সহজলভ্য যে মোবাইলে কল করতেই যা দেরী। “মাল” পৌছে যায় সাথে সাথেই। “আমিতো তোমার পকেটেই” -অবস্থাটা ঠিক এমন। ছোট অথচ অত্যন্ত ক্রেজি এ ড্রাগের আক্রান্তে দিশেহারা বরিশালসহ সারা দেশের লক্ষ লক্ষ পরিবার।
ইয়াবা নামক সর্বনাশা এ মাদককে আমরা যে নামেই ডাকি না কেন, ভয়ঙ্কর এ পাগলা ঘোড়ার অশুভ দৌড় যেন থামছেই না। রুখে দেয়ার কেউ নেই যেন! আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক ঢাল ব্যবহার করা গুটিকয়েক অসাধু লোকের অর্থলিপ্সার মুখে হারাতে বসেছে আমাদের নীতি-নৈতিকতা আর সামাজিক মূল্যবোধ। এর উম্মাদনায় শুধু যুব সমাজই নয়, স্কুল কলেজের কোমলমতি শিশু-কিশোররাও আক্রান্ত। উজ্জল ভবিষ্যত ধ্বংসমুখে পতিত হচ্ছে জীবনের শুরুতেই। প্রকৃত অর্থে এসব কোমলমতি শিশু কিশোরদের সোনালী ভবিষ্যত নয়, ধ্বংস হচ্ছে দেশ ও জাতির উজ্জল ভবিষ্যত। আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, সবার প্রিয় বাংলাদেশ। মরন নেশা ইয়াবায় আক্রান্তের তালিকায় মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। অতি সম্প্রতি এক গবেষনার ফলাফলে এত বিপুল সংখ্যক মেয়েদের এই নেশায় আসক্ত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিনত বয়সী গ্রাহকের সংখ্যাও নগন্য নয় বলে জানা যায়। অথচ মরন নেশা ইয়াবার থাবায় আক্রান্ত যুব সমাজকে উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের চলমান চেষ্টার যেন শেষ নেই। ফলাফল, অন্তহীন প্রচেষ্টার মাঝেই ঘুরপাক খাওয়া কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই বেড়ে চলেছে এর সর্বনাশা আগ্রাসন। বিভিন্ন বয়সী আসক্ত নারী পুরুষের অভিমত অনুযায়ী- সহজলভ্যতা, পরিবহনে সুবিধা ও স্বল্প মূল্যকেই এর বিস্তার লাভের প্রধান কারন বলে জানা গেছে। অসাধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা ইয়াবা বিস্তার রোধে অন্যতম কারন বলে জানান উদ্বিগ্ন গবেষকবৃন্দ। শুধু ছোট খাটো নয়, বড় বড় অনেক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে। ‘চম্পা’, ‘চামেলী’, ‘আর সেভেন’, ‘আর আর’, ‘গোলাপী’ হরেক নামে ডাকা এ বিষকে অনেকেই ‘যৌন উদ্দেপক’ ও এনার্জি বর্ধক হিসাবে গ্রহণ করলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ সম্পূর্ন ভিন্নমত প্রকাশ করেন। উল্টো যৌনশক্তি কমে যাওয়াসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যহানী ও মানষিক ভারসাম্য হারানোর আশংকা করেন বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, অনিদ্রা, স্বাস্থ্যহানী, অস্থিরতা, উগ্র স্বভাবের কারনে এক পর্যায়ে সুস্থ সমাজ থেকে বিতাড়িত হয় “বাবাখোর” তরুন-তরুনীরা। স্বাস্থ্য ও নৈতিক-সামাজিক অবক্ষয়ের একপর্যায়ে ভুল বুঝে পরিত্রাণ না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেকে। যা তার সাথে সাথে তার পরিবারকেও নিয়ে যায় অনিশ্চিত গন্তব্যে। একজন মাদকসেবীর সাথে সাথে শুধু তার পরিবারই নয়, ধ্বংসের মুখে পড়ে আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ। অন্ধকারে হারিয়ে যেতে থাকে আমাদের সম্ভাবনাময় মানব সম্পদ, পিছিয়ে পড়ে জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন।
এ ব্যাপারে জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাসেদুজ্জামান সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মাদকের ব্যাপারে “জিরো টলারেন্স” ঘোষনা করেছি। প্রয়োজনীয় লোকবল ও বাহনের অভাবকে সফলতা অর্জনে অন্তরায় বলে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে তিনি আইন শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ও সাধারন জনগনের সহায়তা কামনা করেছেন।








No comments: