সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে বাবার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নসহ অমানুষিক নির্যাতনের নানা অভিযোগ তুলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ফারিহা নামের এক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছাত্রী। আহমেদ ফারিহা নামের ফেসবুক আইডি থেকে এ ভিডিও প্রকাশের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
২২ জুলাই রাত ১টা ৫৮ মিনিটে প্রকাশিত ১০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে মেয়েটি তার ওপর তার বাবার চালানো বিভিন্ন সময়ের নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন। ভিডিওটি আজ বিকাল পর্যন্ত ৭ লাখ ৭৪ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে মেয়েটি দাবি করেছেন, তার বাবা মিরপুরের একটি স্বনামধন্য রেস্তোরাঁর ডিরেক্টর।
আপলোডকৃত ভিডিওর ক্যাপশনে মেয়েটি লিখেছেন, ‘আমার বাবা, যার হওয়া উচিত ছিল আমার গাইড, আমার রক্ষক তিনি দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আমাকে মৌখিকভাবে ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে এবং আমাকে প্রায় শেষ করে দিয়েছে। তিনি বারবার আমাকে পিটিয়েছেন, বার বার আমাকে লাথি মেরেছেন, আমি উঠে দাঁড়াতে পারি নাই, খেতে পারি নাই! আজ এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, আমি লুকিয়ে আছি। আমার পিতা আমার খোঁজ করছেন, তাই আজ এই ভিডিও আপলোড করতে বাধ্য হলাম যাতে তিনি আমাকে মেরে ফেলতে না পারেন। জাস্ট বাঁচতে চাই আমি। ‘
ভিডিওতে তিনি বলেন, আমার বাবা আমাকে ছোট বেলা থেকেই অনেক মারছে। উঠতে বসতে গালি গালাজ করছে। সে একবার আমার গলা পাড়া দিয়ে ধরছে। আমি মরে যেতাম…। …আমি আমার বাবার সাথে কখনো কোন কিছু শেয়ার করতে পারিনি, কথা বলতে পারিনি, আমার এতোটাই ঘৃণা লাগতো….। …সে আমাকে গোসল করে দেয়ার সময় আমার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ স্পর্শ করেছে…। ২০১২ সাল থেকে আমার বিয়ের জন্য প্রেসার দিতে থাকে। আমি রাজি হয়নি… আমার বাবা আমাকে ইচ্ছে মত মেরেছে। …২০১২ সালে থেকে আমার রুমে কোন লক ছিল না, ছিটকিনি ছিল না। যে কেউ চাইলেই রুমে আসতে পারতো…।
তবে ফারিহার সব পোস্টেই জন্মদাতা পিতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের পর অনেকের সহমর্মিতা পেলেও বিরাগভাজন হয়েছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর। অনেকেই সন্দেহপোসন করে বলেছেন, তরুনী মাদকাসক্ত অথবা ‘এটেনশান সিকার’ ! সস্তা জনপ্রিয়তা পেতেই এমন বিতর্কিত কান্ড ঘটাবার অভিযোগও করেছেন কেও কেও।
ফারিহার পোস্টের নিচে মন্তব্যকারীদের একটি স্ক্রীনশট ।
এদিকে এই ভিডিও দেখে ইরফান উদ্দিন আহমেদ ইরাম নিজেকে ফারিহার ছোট ভাই দাবি করে আজ সকাল ৭টা ৪৭ মিনিটে একটি পাল্টা ভিডিও নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বারবার বলেছেন, একজন সুস্থ মস্তিষ্কের কোন সন্তান কখনো বাবা-মায়ের নামে এসব বলতে পারেনা।
আপলোডকৃত ভিডিওর ক্যাপশনে নিজের বোনের সেই ভিডিও লিংক শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি ফারিহা আহমেদের আপন ছোট ভাই ইরফান উদ্দিন আহমেদ। আজকে মধ্যরাতে আমার বোন একটি ভিডিও বানিয়ে আপলোড করে। কিন্তু তার ভিডিও’র সব কথা মিথ্যা ছিল এবং আমরা কনফার্ম এই ভিডিওতে আমার বোন যা বলেছে তাকে তা বলতে তার দুজন ক্লোজ বন্ধু (সিয়াম আশিক এবং তাজরিন চৌধুরী) প্রেসার করেছে। নিচের স্ক্রীনশটে দেখতে পারবেন আমার আব্বু আম্মুর সাথে আপুর সম্পর্ক কেমন! প্লিজ সঠিক তথ্য জলদি প্রদানের জন্য ভিডিওটি তারাতারি করা হয়েছে, তাই কথাগুলো অগোছালো। ‘
ভিডিওতে তিনি বলেছেন, আজ ৬ দিন হল সে নিখোঁজ, আমরা আমাদের মত যথেষ্ট চেষ্টা করেছি, ইভেন থানায় জিডিও করেছি। …. আজকে মধ্যরাতে ওর বানানো একটি ভিডিও দেখে তাকে বোন বলে পরিচয় দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে,…. একজন সন্তান তার বাবা-মার নামে এরকম জঘন্য কিছু বলতে পারে না। তার ভিডিও দেখে আমরা খুবই হতবাক ..। লাস্ট এক বছর ধরে আমি তার ভেতরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। তার ফ্রেন্ড তাজিন চৌধুরীর সাথে সম্পর্কের পর থেকে লক্ষ্য করেছি যে সে নেশাগ্রস্থ হতে পারে… কারণ সে সারাদিন বাসায় বসে রুমে দরজা লাগিয়ে থাকে, পর্দা টেনে রাখে, জানলা বন্ধ, রুমের লাইট অফ, সবকিছু বন্ধ শুধু একটা ফ্যান চলে। তাকে কিসের জন্য যেন আমার মনে হত সে ওই ফ্রেন্ডের সাথে নেশাও করে থাকতে পারে। কারণ শান্ত মস্তিষ্কে কোন একজন সন্তান তার বাবা-মার নামে এসব বলতে পারেনা…।
অন্যদিকে তাদের এ ভিডিও ঘিরে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন এমনও হতে পারে ফারিহা নিজেই কোন দোষ ঢাকতে পরিবারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। কেউ আবার এটাও লিখেছেন, সাম্প্রতিককালের বেশ কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা-মা নয় সন্তানরাই এসব ক্ষেত্রে বেশি দায়ী। এসব অভিযোগকে খন্ডন করে এটাও লিখছেন অনেকে, সন্তান নয় পরিবারই দায়ী। সূত্রঃ অনলাইন।
No comments: