ছেলের হাতে বাবা জবাই !!
রোববার তরিকুলের মা রাবেয়া বেগম আদালতে এই তথ্য দিয়েছেন।
সাত্তার হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সোহরাব হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘুমন্ত বাবা আব্দুস সাত্তারকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে খুন করে ছেলে তরিকুল ইসলাম। বাবাকে জিম্মায় রেখে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া দুই লাখ টাকা যাতে আর না দিতে হয়, সেই লক্ষে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটনায়।
এদিকে, সাত্তার হত্যায় যুক্ত সন্দেহে নরেন্দ্রপুর মোল্লাপাড়ার ইব্রাহিম নামে একজনকে রোববার দুপুরে আটক করেছে পুলিশ। তিনি ওই গ্রামের মজিদ বিশ্বাসের ছেলে। এছাড়া নিহতের ছেলে তরিকুল এবং তার আরেক সহযোগী জুয়েলকে আটক করা হয়েছে আগেই।
রাবেয়া বেগমের জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে এসআই সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, নিহত সাত্তারকে জিম্মায় রেখে তার বড় ছেলে তরিকুল ইসলাম বিভিন্ন এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নেয়। ঋণ পরিশোধের জন্য সাত্তারকে এনজিওর কর্মীরা চাপ দিতে থাকেন। এছাড়া সাত্তারের মেয়ে আসমা ওমানে থাকাকালে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পাঠান। ওই টাকা তরিকুল নিয়ে খরচ করে ফেলেন। রডমিস্ত্রি তরিকুল মাদকাসক্ত হওয়ায় এসব টাকা নয়-ছয় করে ফেলেন।
এদিকে, এনজিওগুলোর কর্মীদের অব্যাহত চাপে দিশেহারা বাবা তরিকুলকে চাপ প্রয়োগ করতেন। তার মেয়ে আসমাও টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তার বাবাকে বলতেন। এই নিয়ে তরিকুলের সঙ্গে বাবা সাত্তারের প্রায়ই তর্কবিতর্ক এবং ঝগড়াঝাটি হতো।
জবানবন্দিতে রাবেয়া বলেন, ‘টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য তরিকুল তার বাবাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। সে গ্রামের কয়েক বন্ধুকে যোগাড় করে। এরমধ্যে অন্যতম ছিল ইব্রাহিম। ঘটনার দিন অর্থাৎ ২১ জুলাই রাত ৪টার দিকে তরিকুল একটি বড় ছুরি নিয়ে তার বাবার শোয়ার ঘরে ঢোকে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল ইব্রাহিম। আরো ৩-৪ জন বাইরে অন্ধকারের মধ্যে ছিল। তরিকুল তার ঘুমন্ত বাবার গলায় চাকু বসিয়ে দেয়। এরপর তরিকুল তার নিজের ঘরে যায়। আর বাইরে থাকা ইব্রাহিমসহ তার সহযোগীরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে তরিকুল ও ইব্রাহিমকে পালিয়ে যেতে দেখি। পরে আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে সাত্তারকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু সেখানেই সাত্তার মারা যান।’
এসআই সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, রাবেয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবিরের আদালতে জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দির পর রোববার দুপুরে ইব্রাহিমকে আটক করা হয়েছে। তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া তরিকুলকে প্রথমদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। আজকের জবানবন্দির পর তাকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া আরো সন্দেহভাজন আসামি জুয়েলকে আটক করা হয়েছে শনিবার রাতে। জুয়েল ওই গ্রামের হারুন ওরফে পকেটমার হারুনের ছেলে ও তরিকুলের সহযোগী।
গ্রামবাসী জানান, ঘটনার সময় নিহতের আরো দুই ছেলে সুজন ও শিমুলের ঘরের বাইরে থেকে ছিটকানি দেওয়া ছিল। কিন্তু তরিকুলের ঘরে ছিটকানি দেওয়া ছিল না। এই কারণে গ্রামবাসী ও পুলিশের সন্দেহ হয়। যে কারণে তরিকুলকে আটক করা হয়।
No comments: