জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। ২০ বছরে পা দিয়েছেন। সাহসী। প্রতিবাদী। এসব কারণে বন্ধুরা তাকে ‘মাফিয়া গার্ল’ বলে ডাকেন। এমন ডাক উপভোগও করেন। এটা তার সাহসী ও প্রতিবাদী চরিত্রের স্বীকৃতি মনে করেন এই তরুণী। তবে এসব কিছু ছাড়িয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম হাইস্পিড লেডি বাইক রাইডার। তার লক্ষ্য হাইস্পিড লেডি বাইকার হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজেকে তুলে ধরা।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মেয়ে এভ্রিল মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাইক চালানো শিখেছেন। এরপর আস্তে আস্তে মোটরবাইক চালানো তার শখে পরিণত হয়। এ যান ঘিরেই চলতে থাকে তার নানা কসরত। মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন নৈপুণ্য দেখাতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতাসম্পন্ন এভ্রিলের বাইক নৈপুণ্য প্রদর্শনী, বাইক চালানোর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। সেলিব্রেটি বনে যান তিনি। ফেসবুক ফলোয়ারের সংখ্যা ছাড়ায় ৯০ হাজার। বর্তমানে এই তরুণী ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের অ্যাক্টিভিটি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি মিডিয়ার প্রতিও ঝোঁক রয়েছে তার।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের যাত্রা শুরুর কয়েক দশক হলেও নারীদের এখনো গিয়ারলেস স্কুটারের প্রতি আগ্রহ বেশি। তবে কেউ কেউ সেই প্রথা ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। আর তাদের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন জান্নাতুল নাইম এভ্রিল। তিনি কখনো গিয়ারলেস স্কুটারের প্রতি আগ্রহ দেখাননি। হাই সিসি মোটরসাইকেল চালানো তার শখ। আর এ কাজেই তিনি স্বাধীনতা খুঁজে পান। সেই সঙ্গে এটিকে দেখেন নারী স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবেও।
জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল সামনের দিনে নারীদের সরাসরি হাই সিসি মোটরসাইকেল চালানোয় উদ্বুদ্ধ করতে ইয়ামাহা ব্র্যান্ড কোম্পানির নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি মনে করেন, মোটরসাইকেল চালানো কিংবা উচ্চতর প্রযুক্তি গ্রহণ করার মতো বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত তরুণীরা। ভবিষ্যতে তিনি বাইক-সম্পর্কিত যেকোনো উদ্যাপন এবং উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে চান। বাংলাদেশের তরুণী-নারী বাইকারদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি বাইক প্রশিক্ষণ স্কুল পরিচালনা করারও ইচ্ছা রয়েছে তার।
এভ্রিল বলেন, ১৪ বছর বয়সে বাবা আবু তাহেরের বাইকেই তার হাতেখড়ি। তবে ওই সময় বাবার এতে সায় ছিল না। কিন্তু বাইকের প্রতি তার ঝোঁক ছিল প্রচণ্ড। তাই মামার কাছ থেকে বাইক চালানো শিখে নেন। তখন তিনি ডিসকোভারী চালাতেন। এরপর সিসির ব্যাপারটা বোঝার পর হাই সিসির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ভাইয়ের হোন্ডা সিডিআই ১৫০ সিসি চালাতে শুরু করেন। বাইক চালানোর বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে আপলোডের পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, তখন ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের চিফ বিজনেসম্যান সুব্রত রঞ্জন দাস তাকে খুঁজে বের করে কোম্পানিতে কাজ করার প্রস্তাব দেন। ওই কর্মকর্তা তাকে বলেন, তাকে নারী বাইক রাইডারদের আইকন হিসেবে তারা কাজে লাগাতে চান। তার মাধ্যমেই হাইস্পিড বাইকের প্রতি নারীদের আগ্রহী করতে চান। প্রথমদিকে প্রস্তাবে রাজি না হলেও পরে নারীদের এগিয়ে নেয়ার চিন্তা থেকে তিনি ওই কোম্পানিতে কাজ করতে আগ্রহী হন। ভারতের প্রথম নারী বাইকার ভিনু পালিওয়াল ২০১৫ সালের নভেম্বরে ১৭ হাজার কিলোমিটার বাইক চালিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন জানিয়ে এভ্রিল বলেন, ‘আমি তাকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। বিশ্বের অন্যতম সেরা নারী বাইক স্টান্টার ক্রিস্টিনা লি বিলিংসের মতো হতে চাই। ’
ফ্রিস্টাইল স্টান্টার বিলিংস হার্লি ডেভিসনের ট্যাগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাইক নিয়ে বিচিত্র খেলা প্রদর্শন করেন। ভবিষ্যতে নিজের প্যাশনকে ঘিরেই এগিয়ে যেতে চান এভ্রিল। নিজের এই স্বপ্নই ছড়িয়ে দিতে চান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। পাশাপাশি তিনি মিডিয়া অঙ্গনে কাজ করতেও আগ্রহী বলে জানান।
এভ্রিল নারীদের জীবনে গতি আনতে কাজ করতে চান। প্রতিবাদী হতে উদ্বুদ্ধ করতে চান। নিজ অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বহু ছিনতাইকারীকে ধরেছি, ইভটিজারকে ধরেছি। আমি চাই- মেয়েরা সাহসী হোক, অধিকার সচেতন হোক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজেরাই প্রতিবাদ করুক। তার সম্পর্কে বন্ধুদের মন্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার এই সাহসিকতার জন্য, প্রতিবাদী চরিত্রের জন্য এবং হাইস্পিডের মোটরবাইক চালানোই পারদর্শিতার জন্য তারা তাকে ‘মাফিয়া গার্ল’ হিসেবে ডাকে। তবে এই সম্বোধনে তিনি উৎসাহ পান। বলেন, এই সম্বোধনের মাধ্যমে তারা আমার সাহসিকাতার স্বীকৃতি দেয়। মেধাবী এভ্রিল এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
No comments: