গুমরে কাঁদছেন বগুড়ার সেই ধর্ষিতা। ইজ্জত হারিয়ে এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করছেন। নিজের ওপর বর্বরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন। বলেন, ইজ্জতও কেড়ে নিলো ওরা। আবার সালিশের নামে আমার ও মা’র মাথা ন্যাড়া করে দিলো। কার কাছে বিচার চাইবো? এমনিতে রুমকি আপা বলেছে, তোদের মারলে আমার কিছু হবে না। আমি তিনটি ওয়ার্ডের কমিশনার। পুলিশকে টাকা খাওয়াইলেই মামলা ডিসমিস হয়ে যাবে। ধর্ষিতার আকুতি এই অপমান আর কেলেঙ্কারি নিয়ে তারা সমাজে কীভাবে বসবাস করবেন। কী হয়েছিল সেদিন? প্রশ্ন শোনে চুপ হয়ে যান ধর্ষিতা। এরপর তার ওপর চলা চার ঘণ্টার নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন। বলেন, এ বছর এসএসসি পাস করেছি। কিন্তু কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। প্রতিবেশী আলী আজম দিপু শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে আমি আগ্রহ প্রকাশ করি। গত ১৭ই জুলাই তুফান সরকার কলেজে ভর্তি করে দেয়ার কথা বলে আমাকে বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে গিয়ে দেখি বাসায় কেউ নেই। বাসায় প্রবেশের পর আমাকে আটকে ফেলে এক রুমে। কয়েক দফা ধর্ষণ করে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমার চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। একই সঙ্গে বিষয়টি কাউকে না জানানোর ভয় দেখানো হয়। ধর্ষণের ঘটনাটি তার মাকে জানান। এক কান, দুই কান করে ঘটনাটি তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন ও তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি জানতে পারেন। শুক্রবার বিকালে রুমকি আমি ও আমার মাকে তার অফিসে ডেকে নেয়। সেখানেই চালানো হয় মা-মেয়ের ওপর নির্মম নির্যাতন। রুমকির বাসায় যাওয়ার পরই তুফান সরকারের স্ত্রী আশা গুণ্ডা নিয়ে আসে সেখানে। কিছু বুঝার আগেই আমি ও আমার মাকে পেটাতে থাকে। এ সময় তাদের পা ধরে বাঁচার আকুতি জানিয়েছি। কিন্তু ওরা কোনো কথাই শুনছিল না। তারপর রুমকি, আশা ও বেশ ক’জন মানুষ মিলে আমি ও আমার মায়ের মাথার চুল কেটে ছোট করে দেয়। পরে নাপিত ডেকে এনে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এতেই ক্ষান্ত হয়নি হায়েনারা। ওরা আমাদের একটি রিকশায় তুলে বগুড়া শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। অন্যথায় এসিড দিয়ে আমাকে ঝলসে দেয়ারও হুমকি দেয়। বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ধর্ষিতা তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কেঁদে উঠেন। এ সময় ধর্ষিতার মা বলেন, আমাদের ধর্ষণের বিচার করে দেয়ার কথা বলে রুমকি তার অফিস চকসূত্রাপুরে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওরা আমার মেয়েকে পতিতা আখ্যা দেয়। আর আমাকে মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগ আনে। এরপরই তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী স্টিলের পাইপ দিয়ে আমাদের পেটাতে থাকে। টানা চার ঘণ্টা ঘরের ভেতর আটকে রেখে দফায় দফায় আমাদের পিটিয়েছে। পরে মাথা ন্যাড়া করে রিকশায় তুলে দেয়। বলে বগুড়া শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে। ধর্ষিতার মা বলেন, বাবারে আমাদের তো সবই শেষ। ইজ্জত গেছে, সম্মান গেছে। আমাদের এখন বেঁচে থাকা না থাকা সমান কথা। তাছাড়া এত কেলেঙ্কারি নিয়ে এই মুখ মানুষকে দেখাবো কি করে?
ধর্ষিতা বলেন, আমাদের ওপর অত্যাচার চালানোর পর ওরা সাদা কাগজে জোর করে আমি ও মা’র স্বাক্ষর নিয়েছে। ধর্ষিতা বলেন, আমারই যদি দোষ হতো, তাহলে ওরা পালাল কেন? আমি মানুষরুপী হায়েনাদের বিচার চাই।
কে এই তুফান সরকার?
বগুড়ায় এক ভয়ঙ্কর নাম তুফান সরকার। তার বড় ভাই বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার। তুফানের উত্থানও নাটকীয়। বগুড়ায় জুয়ার আসর দিয়ে তার অবৈধ আয়ের যাত্রা শুরু। এরপর মাদক ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরে তুফান বগুড়ার মাদক রাজ্যের নিয়ন্ত্রক। বড় ভাইয়ের সুবাদে সেও এক সময় রাজনীতিতে আসে। পর্যায়ক্রমে শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি হয়। এরপর থেকে শুরু হয় ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স ব্যবসা। রাস্তায় ব্যাটারিচালিত এই সব রিকশা নামানোর আগে তাকে ফি দিতে হয় ২৫০০ টাকা। বগুড়া শহরে বর্তমান ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। প্রত্যেক রিকশা থেকে ২৫০০ টাকা চাঁদা নিলে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন এসব রিকশা থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। প্রকাশ্যে এসব চাঁদা আদায় করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলেনি।
তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর: পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ আদালতে গ্রেপ্তারকৃত চার আসামির মধ্যে তিন আসামির ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম সুন্দর রায় গতকাল রোববার দুপুরে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের আসামিরা হলো- তুফান সরকার, তার সহযোগী আলী আজম দিপু ও রুপম হোসেন। এদিকে তুফানের আরেক সহযোগী আতিকুর রহমান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় তার বিরুদ্ধে রিমান্ড চাওয়া হয়নি। জবানবন্দিতে আতিকুর ধর্ষণের ঘটনা সত্যি বলে জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটি গঠন: আলোচিত এই ধর্ষণ ঘটনার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত বের করতে বগুড়া জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই গঠন করেছেন। এতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদকে প্রধান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, ওই কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
দল থেকে বহিষ্কার: ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তুফানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগের নির্দেশের পর শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেয়। রোববার ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বগুড়া ধর্ষণ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বগুড়ায় একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে। এটা আমাদের সহযোগী সংগঠন, তাই আমরা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে আমরা নির্দেশ দিয়েছি। আওয়ামী লীগের এই নির্দেশের পর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শ্রমিক লীগ থেকে তুফান সরকারকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ বলেন, আমরা তুফানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।
বগুড়া জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শামছুদ্দিন শেখ হেলালও তুফানকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এসময় তিনি জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেলা ২টার দিকে জরুরি সভায় বসা হয়। সভা থেকে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী তাকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ধর্ষিতার পিতা গ্রামীণ বাজারে সামান্য ব্যবসা করেন। আর মা ঢাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। এতদিন মেয়েটি নানিবাড়ি থেকে পড়াশোনা করতো। কিছুদিন আগে মা বগুড়ায় ফিরে গেলে সে তার মা-বাবার সঙ্গে থাকতে শুরু করে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, মা এবং ওই মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার জেলা প্রশাসন বহন করবে। সেই সঙ্গে তাকে আইনগত যাবতীয় সহযোগিতা তার পক্ষ থেকে করা হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর মারজিয়া আক্তার রুমকি ও তার মা রুমিকে পাবনা থেকে আটক করেছে পুলিশ।
কে এই দুর্ধষ ধর্ষক তুফান সরকার
বাড়ি থেকে ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার। বগুড়ার এই প্রভাবশালী নেতা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হননি, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দলীয় ক্যাডার ও এক নারী কাউন্সিলরকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন।
শুক্রবার বিকেলে তাঁরা কিশোরী ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। এই ঘটনায় প্রধান আসামি তুফানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এরইমধ্যে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফুঁসে উঠেছে মানুষ। অনেকেরই প্রশ্ন, কে এই তুফান সরকার?
অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার ক্ষুদে ব্যবসায়ী মজিবর রহমান সরকারের আট ছেলের মধ্যে সবার ছোট তুফান সরকার। ২৪ বছর বয়সী তুফান পারিবারিকভাবে চমড়া ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার বড় ভাই যুবলীগ নেতা মতিন সরকারের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
বড় ভাই আব্দুল মতিন বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক হওয়ায় রাজনীতিতে তুফান সরকারের দ্রুত উত্থান ঘটে। এক সময় তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তিনি একটি বাহিনীও গড়ে তোলেন। মাদকের টাকায় তিনি দ্রুত ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যান।
২০১২ সালের ৪ এপ্রিল তুফানকে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বেড়িয়ে আসেন। একই বছরের ২০ জুলাই একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় তুফান এবং তার তিন ভাই ঝুমুর, ওমর ও সোহাগ গ্রেফতার হয়। তবে কোনো বারই তাদের বেশি দিন জেলে কাটাতে হয়নি।
ফলে তুফানের বেগেই যাবতীয় কুকর্ম অব্যাহত রাখেন তুফান সরকার। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইমরান হোসেন নামে প্রতিবেশী এক যুবদল নেতা খুন হন। ইমরানের মা তার ছেলে হত্যাকাণ্ডে তুফান ও তার ভাইদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেন।
ইমরানের মা তখন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, মতিন এবং তার ভাইদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তার ছেলেকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, একই সন্ত্রাসীরা খোকন নামে তার আরো এক ছেলেকে হত্যার চেষ্টা চালায়। ওই ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ নেয়নি।
আক্ষেপ করে ইমরানের মা বলেন, পুলিশ কখনোই এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। যদি নিত তাহলে ইমরানকে মরতে হতো না।
একাধিক মামলার আসামি তুফান সরকার এক সময় জাতীয় শ্রমিক লীগে যোগদান করেন। তাকে ওই সংগঠনের বগুড়া শহর শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তিনি সংগঠনের ওই পদবি ব্যবহার করে শহরে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার রিকশা-ভ্যান মালিক সমিতির নেতৃত্ব নেন। প্রতিটি রিকশা মালিককে সমিতিতে ভর্তি বাধ্যতামূলক করে তাদের কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ এক বছরের জন্য ২০ হাজার টাকা করে আদায় করেন। সেই হিসাবে বগুড়া শহরে চলাচলকারী ১০ হাজার রিকশা-ভ্যান থেকে এক বছরেই আয় হয় ২০ কোটি টাকা।
এছাড়া সমিতির প্রতিটি রিকশা-ভ্যান থেকে তার সমিতির নামে ২০ টাকা করে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা করে বছরে আরো ২৪ লাখ টাকা আদায় করা হয়। ভর্তি এবং চাঁদার নামে তোলা এই অর্থের ভাগ আজ পর্যন্ত কোনো রিকশা-ভ্যান মালিককে দেওয়া হয়নি। বরং চাঁদাবাজির পুরো টাকা তুফান ও তার সহযোগীরাই ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন।
এভাবে প্রায় দুই বছর চলার পর কয়েক মাস আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বগুড়া সফরকালে চাঁবাবাজি বন্ধের নির্দেশ দিলে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ততদিনে তুফান কোটিপতি বনে যান। সম্প্রতি তিনি নিজ এলাকায় প্রাসাদতুল্য বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘তুফান বাহিনী’র প্রধান তুফানের বিরুদ্ধে শহরের বিভিন্ন স্থানে জায়গা-জমি এবং দোকান-পাট দখলেরও বহু অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ৩ মাস আগে তিনি ক্যাডার বাহিনী নিয়ে শহরের তালুকদার মার্কেটে জনৈক রাজা মিয়া নামে এক ব্যক্তির দোকান দখল করে এক ব্যক্তিকে সেখানে বসিয়ে দেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তুফানের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না। তবে কিশোরী ধর্ষণ মামলায় ফেঁসে যাওয়ার পর পুলিশ তুফানের অপরাধ জগতের খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, তুফানের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টা এবং মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আরো মামলা আছে কিনা তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। ’
এদিকে সহযোগীদের দিয়ে তুলে নিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তুফানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগের নির্দেশের পর শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেয়।
রোববার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বগুড়া ধর্ষণ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বগুড়ায় একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে। এটা আমাদের সহযোগী সংগঠন, তাই আমরা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে তাদের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে আমরা নির্দেশ দিয়েছি।
আওয়ামী লীগের এই নির্দেশের পর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শ্রমিক লীগ থেকে তুফান সরকারকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি।
শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ বলেন, আমরা তুফানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।
উৎসঃ অনলাইন!
No comments: