ঘটনাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। এমনটাই করেছেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু। টানা ৭ দিন তিনি কখনো কৃষক, কখনো রিকশা চালক আবার কখনো আবার সাধারণ শ্রমিক বেশে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পৌর এলাকার পাড়া মহল্লাতে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।
শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছদ্মবেশে ঘুরছেন এক ব্যক্তি। নিজেকে কখনো কৃষক, কখনো রিকশা চালক আবার কখনো সাধারণ শ্রমিক বেশে দেখা যাচ্ছে তাকে। তবে ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু।
তার এই ছদ্মবেশে ঘুরাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, যদি লোক দেখানো না হয়, মেয়রের এই উদ্যোগ অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
জেলায় ২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। এই উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টরা যাতে কোন ভাবেই এ অনিয়ম করতে না পারে তার জন্যই মেয়রের এ উদ্যোগ।
প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নতি হবার পর সব চেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। ইউজিপি-৩ প্রকল্পের এই উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সড়ক বাতি উন্নয়নের কাজ। যা গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে।
কাজ শুরুর পর ঠিকাদাররা যাতে কোন ভাবেই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে না পারে তার জন্য পৌর মেয়র ছদ্ম বেশে ঘুরছেন সে সব এলাকাতে। পৌর মেয়রের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন পৌরসভার ইতিহাসে একজন জনপ্রতিনিধির এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ এর আগে কখনো দেখেনি তারা।
অনেকে আবার এটাকে ভাল কাজের দৃষ্টান্ত হিসাবেও মন্তব্য করছেন। তাদের দাবি এমন প্রশংসনীয় কাজ সারা দেশে অব্যাহত থাকলে ঠিকাদারদের অনিয়ম দুর্নীতি রোধকল্পে বড় ভূমিকা রাখবে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।
পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু অবশ্য বলছেন, ভোটের আগে পৌরবাসীর কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বদ্ধ পরিকর তিনি। পৌরবাসীর উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারদের অনিয়ম কোন ভাবেই বরদাশত করা হবে না।
সুশাসনের জন্য অভিযান সুজনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহাবুল ইসলাম সেলিম বলছেন, ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় মেয়রের এই উদ্যোগ যদি লোক দেখানো না হয় তা হলে সুশাসন তো বটেই, ঠিকাদারদের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
একঝলক দেখলে কেউই চিনতে পারবে না। একেবারে বেশভুষা পাল্টে এ কেমন করে তিনি ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়! কি এমন কারণ রয়েছে এর পিছে! এক-দুই দিন নয়, পুরো এক সপ্তাহ ছেড়ে দিলেন তার নিজস্ব পরিচয়। করলেন অনেক কিছু। আর এই অনেক কিছুর মাঝেই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। এবার জেনে নিই কে তিনি। তিনি আর কেউই নন- তিনি হলেন চুয়াডাঙ্গা শহরের মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু। এই টানা এক সপ্তাহ লুঙ্গি, পাতলা হাফহাতা শার্ট, মাথায় টুপি আর গলায় গামছা পেঁচিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন চুয়াডাঙ্গা শহরের এই মেয়র। এ সময় কখনো তিনি রিকশা চালিয়েছেন। আবার কখনো শ্রমিক সেজে কাজ করেছেন ঠিকাদারদের সাথে।
এদিকে মেয়রের এমন উদ্যোগে অন্য রকম আলোড়ন তুলেছে এলাকায়। এলাকাবাসী বলছেন, মেয়র জিপুর মতো মানুষের হাতে শহরের উন্নয়নের দায়ভার অনেকটা আশীর্বাদ হয়েছে তাদের জন্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছে ঘটনাটি। তারা আরো বলেন, চুয়াডাঙ্গার মেয়রের কাছ থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
এ ব্যাপারে ছদ্মবেশ ধারণকারী মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু জানান, তার শহরে ২৫ কোটি টাকার উন্নয়নের প্রকল্প শুরু হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে বারবার তিনি ঠকেছেন, ঠকেছে শহরের মানুষ। উন্নয়ন কাজ করাতে গিয়ে ঠিকাদাররাই দুর্নীতি করে টাকা খেয়ে ফেলে। কাজ যতটুকু হয় তার মান খুবই জঘন্য। অল্প দিনের মধ্যেই আবার সংস্কারের কাজ শুরু করতে হয়। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তিনি এবার নিজেই মাঠে নেমেছেন চুরি ঠেকাতে।
তিনি বলেন, 'প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায়। ইউজিপি-৩ প্রকল্পের এই উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সড়কবাতি উন্নয়নের কাজ, যা গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে এসব কাজের জন্য। '
মেয়র জিপু আরো বলেন, 'কাজ শুরুর পর ঠিকাদাররা যাতে কোনোভাবেই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে না পারে তার জন্যই ছদ্মবেশে ঘুরছি। কখনো কৃষক, কখনো রিকশাচালক ও কখনো সাধারণ শ্রমিকের বেশে হাজির হয়েছি সাইটে। কাছ থেকে দেখার জন্য যে কোথায় কে কীভাবে চুরি করে। '
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের এই ছদ্মবেশে ঘুরাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এটাকে হাস্যকর কাজ হিসাবে মন্তব্য করলেও সাধারণ শ্রেণী পেশার মানুষ এটাকে ভাল কাজের নমুনা বলে মন্তব্য করেছেন।
ঠিকাদারদের অনিয়ম দুর্নীতি রুখতে পৌর মেয়রের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, পৌরসভার ইতিহাসে একজন জনপ্রতিনিধির এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ এর আগে কখনো দেখেননি তারা।
No comments: